• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

তীব্র গরমে কদর বেড়েছে চন্দনাইশে তালপাতার হাতপাখার

  • ''
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চলছে তীব্র তাপদাহ। গরম আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। এমন পরিস্থিতিতে গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ হাত বাড়ায় হাতপাখার দিকে। তীব্র গরমের এ সময় চট্টগ্রামের চন্দনাইশের তালপাতার হাতপাখা ব্যবহার করছেন অনেকেই। দিনদিন সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই হাতপাখা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি হাতপাখা পাইকারি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতিটি হাতপাখা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর এসব হাতপাখা তৈরি করতে নিয়মিত কাজ করছেন চন্দনাইশ উপজেলার পাঁচ শতাধিক পরিবার। গরম যতই বাড়ছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে এসব পরিবারের। জানা গেছে, চন্দনাইশের কয়েকটি গ্রামে এখনও বহু পরিবার হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চন্দনাইশে তৈরি হাতপাখা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাখা শিল্পীদের কয়েকজন জানান- বাংলাদেশ কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফকির পাড়ায় তৈরি হাতপাখা বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত চীন, কোরিয়া ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। তবে অনেক আগে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাতপাখা রপ্তানি হয়।

চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ জোয়ারা, জিহস ফকির পাড়া, দক্ষিণ গাছবাড়িয়া ছিকন কাজী পাড়ায় এ সকল হাতপাখা বানানো হয়। ১৯৪২-৪৩ সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে আবদুল বারীহাট এলাকার সাহাব মিয়া, বদর রহমান, আবুল হাশেমসহ বেশ কয়েকজন জীবিকার সন্ধানে বের হয়ে এ শিল্পের কাজ শিখে আসে। তারাই চন্দনাইশে হাত-পাখা শিল্পের গোড়াপত্তন করে বলে জানা গেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ-শিশু সকলে একসাথে পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে এখন। বাড়ির পুরুষেরা হাতপাখা তৈরির সরঞ্জাম ও উপকরণ সংগ্রহ করে থাকে। আর শৈল্পিক কাজ সুনিপুণভাবে শেষ করে বাড়ির মহিলারা।

হাতপাখা তৈরির কারিগররা জানান, পরিবারের অন্যান্য কাজ সেরে সকলে মনোনিবেশ করে পাখাশিল্পের কাজে। জিহস ফকির পাড়ার আবদুল শুক্কুর জানালেন, তাদের সংসার চলে এ পাখা বিক্রি করে। বাড়ির মহিলারা এ শৈল্পিক কাজটি বাঁচিয়ে রেখেছে। তারা বলেন, চৈত্র-বৈশাখ এ দুমাস পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটায় তারা। একজনে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে। একটি বাঁশের সামান্য অংশ, বেত দিয়ে পাখা তৈরি করা হয়। আর বাঁশ ও বেতের দাম বেশি হওয়ায় পাখার দামও কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘির বলি খেলায় হাতপাখ্য বিক্রির জন্য তারা ব্যাপক পরিশ্রম করে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে পাখা তৈরি করে। হাতপাখা তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে- তালপাতা, ওলু বাঁশ, নিতা বাঁশ, বেত ও রং। কোন আধুনিক মেশিন ছাড়াই শুধুমাত্র দা, ছুরির সাহায্যে তৈরি হচ্ছে এ দৃষ্টিনন্দন হাতপাখা।

বিক্রেতারা জানান, বছরব্যাপী এ হাতপাখার চাহিদা রয়েছে। কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে হাতপাখা কিনে নিয়ে যায় চন্দনাইশের জিহস ফকির পাড়া থেকে। তবে সরকারিভাবে এ পাখা শিল্পীদের কোনোরকম প্রশিক্ষণ বা ঋণ সুবিধা নেই বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এলাকার সচেতন মহল এ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।

জিহস ফকির পাড়ার ৭০ বছরের জরিনা খাতুন ও ৬০ বছরের জয়নাল আবেদীন জানালেন- তারা পূর্ব পুরুষের স্মৃতি ধরে রাখতে এখনও হাতপাখা তৈরি করে যাচ্ছেন। লাভ কমে যাওয়ায় দিন দিন এ - ব্যবসা থেকে সরে পড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে অনেকে। সরকারিভাবে এ শিল্পকে ধরে রাখতে সহজশর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা পেলে এ শিল্পের কদর বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads